মৃত্যু কত সহজ
প্রকাশিত : ১১:১০, ২২ জুন ২০২০ | আপডেট: ১১:১৬, ২২ জুন ২০২০
জীবনে চলার পথে আমরা এমন একটি অবস্থায় এসে পৌঁছেছি যেখানে নেই কোন জীবনের মূল্য। কত সহজেই ঝরে যাচ্ছে কত প্রাণ। রাত পোহালেই শুনতে হচ্ছে মৃত্যুর খবর। চারিদিকে অসহায়ের আর্তনাদ, চিৎকার আর হাহাকার। মনে হচ্ছে এটাই আমাদের জন্য অবধারিত, বেঁচে আছি এটাই বিস্ময়কর।
রাত পোহালেই শুনতে পাচ্ছি কত আপনজনের মৃত্যুর খবর। কিছুই বলার নাই, কিছুই করার নাই। কত আত্মীয়স্বজন-আপনজন চেনা অচেনা কত মানুষ মুহূর্তের মধ্যে চলে যাচ্ছেন আপন ঠিকানায়। যেখানে একজন কারো মৃত্যু হলে এলাকাজুড়ে হাহাকার শুরু হয়ে যেত, সেখানে আজ কত শত লাশের সারি অথচ এক ফোঁটা পানিও নেই চোখে, দিন দিন মৃত্যু কতটা সহজ হয়ে যাচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে এই অদৃশ্য শত্রুর ছোবলে প্রতিদিনই মৃত্যুর মিছিলে যুক্ত হচ্ছেন কত মানুষ। বিশ্বের কত ক্ষমতাধর ব্যক্তি প্রাণ হারাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এছাড়া দেশের মন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রাণ হারাচ্ছেন সাধারণ বহু মানুষ। আজ মানুষের জীবনের মূল্য কোথায়? কোথায় আমাদের আজকে গাড়ি গাড়ি টাকা? কোথায় আজ আমাদের অর্থ-সম্পদ? কোথায় আজ আমাদের বিত্ত-বৈভব? কোথায় আজ আমাদের আত্মঅহংকার? কোথায় আজ আমাদের দাম্ভিকতা? একটি বারের জন্যও কি আজ আমরা চিন্তা করছি? জীবনে মৃত্যু কতটা সহজ? মৃত্যু আমাদের কত কাছাকাছি?
কত আদরের সন্তান, প্রিয়দর্শিনী স্ত্রী, কত আদরের মা-বাবা ভাই-বোন, কত সুন্দর এই ধরণী সব কিছুই রেখে চলে যেতে হচ্ছে আমাদের। একটি বারের জন্যেও কী আমরা চিন্তা করছি- আমাদের শেষটা কোথায়? একটু ভালো থাকার জন্য আমরা কতই না কী করি। কত যুদ্ধ, কত মিথ্যা, কত দাম্ভিকতা, কত অহংকার, কত বড়ত্ব- আহা... জীবন কত ছোট।
আজ রাস্তার পথের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কত অসহায় মানুষের চিৎকার, কত হাহাকার। কত মানুষ না খেয়ে দিনযাপন করছে। কত মানুষ আজ একবেলা দুইবেলা খেয়ে দিনযাপন করছে। জীবনযুদ্ধে লড়ছে কত মানুষ। এক মুঠো ভাতের আশায়। সহায়-সম্পত্তি সব রেখেই তো আমাদের বিদায় নিতে হবে। তাহলে ওই সম্পদ দিয়ে আমাদের কী হবে? যদি আমরা কারো পাশেই না দাঁড়াতে পারি।
হাসপাতালের বারান্দায় কাটছে কত মানুষের জীবন। মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে কত আপনজন। নিদ্রাহীন সময় কাটছে কত পরিবারের। তার কোন ইয়ত্তা নেই। একবারও কী আমরা নিজেরা অনুধাবন করছি এসব সময়গুলো কত কষ্টকর, কত বেদনাদায়ক। আজ অনুধাবন করার সময় এসেছে আমাদের। এখনই আমাদের সচেতন হতে হবে। মানবিক হতে হবে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। মানুষ হতে হবে। মানুষে মানুষে তৈরি করতে হবে সম্প্রীতির বন্ধন।
লেখক: সাংবাদিক
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।